Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

একজন কৃষক ছানোয়ারের ভাগ্য বদলের গল্প

একজন কৃষক ছানোয়ারের ভাগ্য বদলের গল্প
কৃষিবিদ সাবরিনা আফরোজ
অজপাড়াগায়ের প্রান্তিক কৃষক ছানোয়ার হোসেন। কৃষক বাবা চেয়েছিলেন যে কষ্টের জীবন তিনি পাড়ি দিচ্ছেন সেই কষ্ট তার সন্তানকে স্পর্শ না করুক। কবি ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মত তিনিও চেয়েছিলেন “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”। বাবার কথা রাখতে পড়াশোনা করেছিলেন। বিএ পাশ করে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু শিরায় যার কৃষির রক্ত  সে আর অন্য পেশায় কিভাবে থাকতে চায়! ছোটবেলায় পাড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সাথে মাঠে যেতেন কৃষি কাজ করতে। সেই থেকে মাঠের সাথে সখ্যতা। তবে  কৃষিকে পেশা হিসেবে নেওয়ার পর তিনি  গতানুগতিক কৃষিকে পাশ কাটিয়ে গ্রহণ করেছেন আধুনিক কৃষি। শুরু করেন আধুনিক ও বানিজ্যক কৃষির জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ। তিনি নানা ধরনের দেশি বিদেশি ফলের চাষ বিশেষ করে পেঁপে ,পেয়ারা , কুল, মাল্টা ড্রাগন, কলা ,আনারস সহ মৌসুম ভিত্তিক নানা ফসল উৎপাদন করে এলাকার কৃষিতে এক বিপ্লবের সুচনা করেন।
কফি চাষ : ছানোয়ার হোসেন ২০১৭ সালে শখের বসে কফি চাষ শুরু করেন। প্রথমে রাঙ্গামাটি জেলার রায়খালি থেকে ২০০টি চারা সংগ্রহ করেন।  মধুপুরের লাল মাটি ও জলবায়ু কফি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় এটি চাষ করে তার সফলতা এসেছে অনেক। তিনি এখন দুই বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন বিশাল কফির বাগান। তার বাগানে বর্তমানে ছয়শোর অধিক পরিপক্ক কফির গাছ আছে। ছানোয়ার হোসেন তার বাগানে এরাবিকা ও রোবাস্টা এই দুই ধরনের কফি চাষ করছেন। তবে রোবাস্টা গাছের কফি চাষ করে তিনি ভাল ফলন পেয়েছেন। দেবদারুর চারার মত দেখতে কফির চারাগুলোয় থোকায় থোকায় যখন ফল ধরে তখন এক অভাবনীয় নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারনা হয়। কফির লালটুকটুকে পাকা ফল অথবা কাঁচা হলুদ ফল দুটোই বাগানের সৌন্দর্য্য বর্ধন করছে বহুলাংশে। ছানোয়ার হোসেন জানান মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পরিকপক্ক কফি গাছে ফুল আসা শুরু করে। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটি গুটি ফল আসে। আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পরিপক্কতা লাভ করে। লালচে হয়ে যাওয়া কফির ফল গাছ থেকে  সংগ্রহ করে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হয়। তারপর লম্বা সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। একটু নরম হওয়ার পর কফির উপরের চামড়া ছাড়িয়ে নিতে হয়। পরে এগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। রোদে শুকিয়ে নেওয়ার পর খোসা সহ প্রতি কেজি কফি বিক্রি হয় এক হাজার টাকায়। একটি গাছ থেকে বছরে পাচ কেজি কফি ফল পাওয়া যায়। ফলন দেওয়া শুরু করলে একটানা ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত কফি পাওয়া যায় একটি গাছ থেকে। ছানোয়ার হোসেন বলেন কফি প্রক্রিয়াজাত করাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। বাজারজাত ও কফি পান করার উপযুক্ত করতে মেশিনের মাধ্যমে কফি বীজ গুড়া করতে হয়। তিনি গ্রিন কফি দেড় হাজার টাকা ও প্রসেসিং করা কফি আড়াই হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন পাচ বছরে আমার প্রায় দুই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমি পাঁচ লক্ষ টাকার কফি বিক্রি করেছি। আমি মুলত এই কফি প্রসাধনী কোম্পানি ও অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করি। আমি কফি প্রক্রিয়াজাত করা মেশিন কিনেছি। কফিকে বড় একটি শিল্পে নিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে আমার।
বাউকুল : বাউকুল চাষের মাধ্যমে এক বিঘা জমি থেকে ছয় বছরে সম্ভাব্য নুন্যতম ১৮-২০ লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব। চারা লগানোর প্রথম বছর ছাড়াও প্রতি বছর গাছ ছাটার পর জমি ফাঁকা হয়ে যায়। তখন মৌসুমী সবজি চাষ করে কুল বাগানের বাৎসরিক খরচ উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব। অন্তবর্তীকালীন ফসল হিসেবে বেগুন, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়শ অথবা হাইব্রিড ধনেপাতার  চাষ করা যায়। এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে প্রথম বছর চারার দরকার হয় ১৫০ টি। তিন বছর পর দুটি গাছের মাঝখান থেকে একটি গাছ উঠিয়ে ফেললে বিঘা প্রতি গাছের সংখ্যা দাড়ায়  ৭৫ টি। সেই হিসেবে ছয় বছরে এক বিঘা জমি থেকে নীট লাভ হয় ১৭-১৮ লক্ষ টাকা। বাউকুল থেকে সফলতা পাওয়ার পর এলাকার অনেক যুবক বাউকুল চাষ করে স্ববলম্বী হয়েছে।
নিরাপদ আনারস চাষ : মধুপুরের আউশনারা ইউনিয়নের ইদিলপুর গ্রামের গারো ভেরেনা সাংমা ষাটের দশকে ভারতের মেঘালয় থেকে জায়ন্টকিউ জাতের কিছু চারা এনে প্রথমবারের মত মধুপুর গড়ে আনারস চাষ শুরু করেন। এখন আশেপাশের কয়েকটি উপজেলা সহ প্রায় ১০ হাজার হেক্টরে এখন আনারস চাষ হচ্ছে। বছরে প্রায় ২ লাখ টন আনারস উৎপাদিত হয় এ অঞ্চলে। জুলাই আগস্ট এই দুই মাস আনারসের মৌসুম ধরা হলেও এখন প্রায় সারা বছরই মধুপুরের আনারস পাওয়া যায়। জায়ান্টকিউ, হানিকুইন, আশি^না ইত্যাদি জাতের আনারস চাষ হয় এখানে। সম্প্রতি ফিলিপাইনের এমভি-২ জাতের আনারসেরও চাষ হচ্ছে মধুপুরে। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর ক্যামিকেলের অপব্যবহারের কারণে মধুপুরের আনারস তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। কৃষক ছানোয়ার হোসেন অসাধুচক্রের মাধ্যমে আনারসের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে শুরু করেন নিরাপদ আনারস চাষের সংগ্রাম। প্রথমদিকে এককভাবে নিরাপদ আনারস বিপননে তিনি বিভিন্নভাবে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। এরপরও তিনি হাল ছেড়ে দেননি। নিরাপদ আনারস নিয়ে প্রচারণার কারনে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এককভাবে তিনি আনারসের যোগান দিতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে তিনি এলাকার ৫০ জন প্রগতিশীল চাষী নিয়ে গঠন করেন নিরাপদ ফল ও ফসল উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড যার মাধ্যমে নিরাপদ আনারস উৎপাদন করে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ২০২১ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদোগে ফিলিপাইন থেকে আমদানিকৃত এমভি-২ জাতের আনারস চাষ শুরু হয়। সুপার সুইট হিসেবে পরিচিত বিখ্যাত  এমভি-২ জাতের আনারস খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনসম্পন্ন। বিশ^বাজারে এর অনেক চাহিদা রয়েছে। রপ্তানিযোগ্য এ আনারস আমাদের দেশের প্রচলিত আনারসের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি ও ভিটামিন সি এর পরিমাণ ৩-৪ গুণ বেশি। এমভি-২ আনারস একইরকম সাইজের হয়। এ আনারস দ্রুত পঁচে না। এছাড়া দেশীয় আনারসের চোখগুলো থাকে ভিতরের দিকে। আর এ জাতের আনারসের চোখগুলো থাকে বাহিরের দিকে। ফলে পুষ্টিসম্পন্ন অংশের অপচয় কম হয়। ছানোয়ার হোসেন আশা করেন এই আনারস চাষের মাধ্যমে ভাগ্য বদলাবে মধুপুরের হাজারো আনারসচাষীর।
অন্যান্য ফসলের চাষ
কৃষক ছানোয়ার হোসেন ২০১৫ সালে মধুপুরে প্রথম বনিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। নানারকম গুণসম্পন্ন ড্রাগনফল বানিজ্যিকভাবে চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন তিনি। রোগবালাই কম হওয়ার পাশাপাশি চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায়  তিনি ড্রাগন চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। তার বাগানে তিনি লাল, হলুদ ও সাদা তিনপ্রকার ড্রাগন চারা রোপণ করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছে  ফল ধরে। প্রতি কেজি ড্রাগন  তিনি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া তিনি তার বাগানে থাই পেয়ারার চাষ করেছেন। কৃষক ছানোয়ার জানান প্রতি একর জমিতে থাই পেয়ারা চাষে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। উৎপাদিত পেয়ারা বিক্রি হয় ৮৫ থেকে ৯৫ হাজার টাকায়। এছাড়া তিনি রপ্তানিযোগ্য কলা জি-নাইন চাষ করেছেন। এ জাতের কলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি উচ্চ ফলনশীল। এ জাতের কলার একটি ছড়ি আড়াই মণ পর্যন্ত হতে পারে। প্রতিটি ছড়িতে প্রায় ২০০ টি কলা পাওয়া যায়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দপ্তর সংস্থার সহযোগিতা/পরামর্শে কৃষক ছানোয়ার কলাগুলোকে নিরাপদ রাখতে ছড়িগুলোতে ফ্রুটব্যাগ পরিয়েছেন। এতে করে কলাগুলো সতেজ থাকবে ও কলাগুলোতে পোকার আক্রমণ হবে না। এছাড়া কলা চাষের জমিতে তিনি অন্তবর্তীকালীন ফসল হিসেবে বেগুন, পেঁপে চাষ করেন। এক বছরে তার কলা চাষে দেড় লক্ষ টাকা লাভ করেছেন। প্রতিদিন প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে তার কৃষি খামার অনেক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। তার এ কৃষি খামার থেকে বাৎসরিক আয় প্রায় ৮-১০ লক্ষ টাকা। তিনি ও তার পরিবারের সকলেই এ কৃষি খামারের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করছেন।
সামাজিক কার্যক্রম ও সম্মাননা : ছানোয়ার হোসেন ছিলেন একজন শিক্ষক। সেখান থেকে এসেছেন কৃষি পেশায়। কিন্তু গ্রামে এসে উপলব্ধি করেন অধিকাংশ কৃষক শিক্ষার অভাবে তাদের জীবনমানের পরিবর্তন করতে পারেন না। অর্থাভাবে তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন না। কৃষকেরা যেন তাদের সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারেন সে জন্য ২০১৪ সালে পাঁচ বিঘা জমি দান করে এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন মহিষমারা কলেজ। এছাড়া কৃষির প্রতি মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য কৃষি ও কৃষিকাজে তরুনদের মাঝে জনপ্রিয়করে তোলার জন্য ২০১৭ সালে শুরু করেন উৎপাদনমুখী শিক্ষা কার্যক্রম, শিশু, কিশোর, তরুনদের বিনোদন ও খেলার ছলে বাড়ির আশেপাশে পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত জমিতে ছাদে বারান্দায় ও টবে নিরাপদ ফল, ফসল ও শাকসবজি উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত করায় এ উৎপাদনমুখী শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছেন। কৃষি কাজে সফলতার জন্য তিনি বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয়কৃষি পুরুষ্কার-১৪২৬-এ ব্রোঞ্জ পদক’ পেয়েছেন।
আমাদের দেশে এখন বাড়ছে স্বাস্থ্য সচেতনতা। একজন সচেতন কৃষকই হতে পারে একটি সুস্থ জাতির অন্যতম নিয়ামক। কৃষিতে মাত্রারিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি এটি ফসলের ক্ষেতে মাটির বুনটে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। দেশে এখন অনেক চাষী জৈব কৃষির দিকে ঝুঁকছেন। উত্তম কৃষি চর্চা যেখানে ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ সবক্ষেত্রেই খাদ্য নিরাপদ রাখার প্রচেষ্টায় আছে সমগ্র বিশ^, বাংলাদেশেও তার ছোঁয়া লেগেছে। কৃষক ছানোয়ারের মত প্রগতিশীল কৃষককেরাই আমাদের দেশের অর্থনৈতিক চাকার গতি বাড়াবে। বাংলাদেশকে বিশ^বাজারে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়।

লেখক : আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৭৫২৬৮৪০, ই-মেইল :sab.ar777@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon